January 29, 2025, 5:26 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী একই সঙ্গে চালের দাম কারসাজির অভিযোগে অভিযুক্ত আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের রথখোলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
রশিদ বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির (বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন) ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদন জোন কুষ্টিয়ার খাজানগরের রশিদ রশিদ এগ্রো লিমিটেডসহ কয়েকটি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শিহাবুর রহমান জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় এ চাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন রাজশাহী অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত।
ওসি জানান, রশিদের নামে বাকি দুটি মামলা হয় কুষ্টিয়ায়। ওই দুই মামলায়ও গত সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আমলি আদালত।
আব্দুর রশিদ ওরফে চাল রশিদ দেশের চাল সিন্ডিকেটের মূলহোতা বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ইশারায় দেশে চালের দাম উঠানামা করত। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, রাজশাহীর ইনাম ফিড মিলের মালিক আতিকুর রহমানের এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রশিদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬৭ টাকার একটি মামলা করেছিলেন তিনি। ওই আবেদনে বলা হয়, আসামি তার ব্যাংক হিসাবে আমার কাছ থেকে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬৭ টাকা অগ্রিম নিয়ে মৎস্য খাদ্যের কাঁচামাল উঙজই (ফব ড়রষবফ ৎরপব নৎধহ) কিংবা টাকা কোনোটাই দিচ্ছিলেন না। পরে আতিকুর রহমান রশিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মহামান্য আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রশিদ ও তার পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে শ’য়ের কাছাকাছি মামলা রয়েছে। সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক সহ দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লাপাত্তা ছিলেন আবদুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। এত মামলার আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিলো। এই নিয়ে পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ছিলো বিভিন্ন মহলে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি সংস্থা ও আদালত সূত্র বলছে, এই নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কয়েক দফায় ঋণ পরিশোধের নোটিশ দিলেও তাতে সাড়া দেননি আবদুর রশিদ ও তার পরিবারের লোকজন। তাই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত আবদুর রশিদ ও তার পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে ৬৮টি মামলা দায়ের করেছে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
নাম-প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুর রশিদ প্রভাবশালী চাল ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋনের টাকা তিনি পরিশোধ করেন না। বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধের নোটিশ দিয়েও সাড়া দেন না তিনি ও তার পরিবার। তাই উপায় না পেয়ে কয়েকটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। এতে আবদুর রশিদ ও তার পরিবার লোকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও নির্বিঘ্নে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন আবদুর রশিদ। রাজকীয় ভাবে বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে তাকে দেখা যেত। এতে অনেকটাই নির্বিকার ছিলো প্রশাসন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে সিআর ৬৪৩/২৩ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি।
তবে তিনি ও তার পরিবার সদস্যরা আত্মগোপনে ছিলেন বলে দাবি করেছেন এই পুলিশ কর্মকতা।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান শনিবার রাতে জানান, আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুলিশ সকল ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেবে। কোন দোষীকে ছাড় দেয়া হবে না।
Leave a Reply